শাহরাস্তি উপজেলার হাইড়েরপাড় গ্রামে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে নানামুখী গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। কোনো প্রকার আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই গোপন সমঝোতায় লাশ দাফন করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ১০ মে গভীর রাতে ঐ গ্রামের মিজানুর রহমানের পুত্র মোহাম্মদ হোসাইন (২৬) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরদিন সকালে বাড়ির লোকজন বাড়ির পেছনে থাকা কড়ই গাছের সাথে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। তারপর ঘটে নানা ঘটনা। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মাস পূর্বে মোহাম্মদ হোসাইনের সাথে শাহরাস্তি পৌর এলাকার কাজিরকাপ গ্রামের ছফিউল্লার মেয়ে রিনা আক্তারের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর থেকে মোহাম্মদ হোসাইন তার স্ত্রীকে মেনে নিতে পারেনি। তাদের অল্প ক' দিনের বিবাহিত জীবন ছিল লোক দেখানো। রিনার পরিবার জানায়, হোসাইন পরকীয়া প্রেম করার কারণে স্ত্রীকে মেনে নেয়নি। তাদের বিয়ের সময় কাবিননামায় দেনমোহরানা নির্ধারণ করা হয় দেড় লাখ টাকা। এরপর গত কিছু দিন পূর্বে হোসাইন ও রিনার পরিবার পক্ষ উক্ত বিষয়টি সমাধানের উদ্দেশ্যে বসেন। এতে শোরসাক এলাকায় ক'জন সালিসের উপস্থিতিতে একপর্যায়ে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্যে ৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা দেয়ার জন্যে মোহাম্মদ হোসাইনের উপর রায় দেয়া হয় । আগামী ১৫ মে উক্ত টাকা দেয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উক্ত টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে মোহাম্মদ হোসাইন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এদিকে হোসাইনের মৃতদেহ রেখে সালিস ও পরিবারের সদস্যরা হোসাইনের শ্বশুর বাড়ির লোকদের সাথে দফায় দফায় সমঝোতা বৈঠক করে। এক পর্যায়ে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের মধ্যে আপোষ হয়। হোসাইনের পিতা মিজানুর রহমানের নিকট এত টাকা না থাকায় তাৎক্ষণিক শোরসাক বাজারে অবস্থিত ডায়মন্ড ঋণদান সমিতি থেকে ২ লাখ টাকা উত্তোলন করে রিনার পরিবারকে প্রদান করে। অপরদিকে এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে শাহরাস্তি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ দাফনের অনুমতি প্রদান করেন। হোসাইনের ভাবী মনি বেগম এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, হোসাইনের স্ত্রী রিনা ভালো মেয়ে, আমরা তাকে রাখতে চেয়েছি। কিন্তু হোসাইন মেনে নিতে পারছিলো না। যেহেতু হোসাইন মারা গেছে তাই তাদের দাবি পূরণ করা হয়েছে।
হোসাইনের মা রোকেয়া বেগম সাংবাদিকদের দেখে বলেন, আমরাতো গতকাল পুলিশকে টাকা দিয়েছি, আপনারা কেন এসেছেন? এ ব্যাপারে সালিস সালেহ আহমেদ, মনির হোসেন ও তৈয়ব আলী তালুকদার জানান, তারা দু'পক্ষের মাঝে সমাধানের চেষ্টা করছিলো। ৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা নির্ধারণ করার পেছনে কী যুক্তি ছিল সে সম্পর্কে তিনি বলেন, সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখতে এত বড় টাকার অংক নির্ধারণ করা হয়েছে। যাতে হোসাইনের পক্ষে এ টাকা যোগাড় করা সম্ভব না হয়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, হোসাইন মৃত্যুর আগে চিরকুট রেখে গেছে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ব্যাপারে হোসাইনের শ্বশুর বাড়িতে যোগাযোগ করা হলে রিনার জেঠা মেহার দক্ষিণ ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মোঃ আবু তাহের প্রকাশ ভোলা চকিদার ২ লাখ টাকা নির্ধারণের কথা স্বীকার করেন। টাকা গ্রহণের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান। তবে রিনার সাথে যাওয়া নিকটাত্মীয় শাহরাস্তি পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর ছকিনা বেগম টাকা গ্রহণের বিষয়টি সাংবাদিকদের মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন।

STC_Azad

Stc_Azad

Simple Blogger On Blogspot.

Post A Comment:

0 comments: